নব আলোকে বাংলা

উত্তরাধিকার। অঙ্গীকার। দূরদৃষ্টি।

 

সম্পাদক

সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ

পাঠক পরিষদঃ চঞ্চল চৌধুরী, শুভলগ্না শোয়ারা

 

বিজয় দিবস সংখ্যা

প্রকাশ কালঃ

ই ডিসেম্বর ২০০৯

Suprateek Aroop Ghosh

 

 

 

 

 

 

এবারের প্রকাশনা

কবিতা

৭১' আমাদের নক্ষত্রের বাগান

 

নাজনীন খলিল

 

'নক্ষত্রের ফুলে ফুলে এ আকাশ ভরে যাবে
যাই মা--নক্ষত্রের ফুল নিয়ে আসি।'

মা শুধু অপেক্ষায় থাকে...........................

আকাশে-বাতাসে বিজয়-ধ্বনিটি বেজে ওঠে

রাজা-ধীরাজের বেশে বীর-সেনানীরা ফিরে আসে;
নিজেকে দ্বিখন্ডিত করে বিধবার ছেলেটিও ফিরে আসে
হুইল-চেয়ারে বসা-----হাঁটু পর্যন্ত দুই পা কাটা
তবু মুখে হাসি--সবুজ পতাকাটি দুই হাতে ধরা।
---' কেঁদোনা মা--আমিতো ফিরেছি।ভাবো
তোমার মতো আরো কত মায়ের সন্তানের,ফেরাই হয়নি।
আমরা এবার স্বাধীন হয়েছি।
এবার আমাদের সব দৈন্য ঘুচে যাবে;
এবার ঠিকই আমাদের আকাশে নতুন সূর্য ঊঠবে
রাতগুলো নক্ষত্রের ফুলে ভরে যাবে।'

৩৭ বছর পর---ছেলে ভাবে
মাকে দেয়া কথাটি রাখা হলোনা;
আমাদের নক্ষত্রের বাগান আর আমাদের হলোনা
পিশাচেরা সেখানে আজো খেলে যাচ্ছে--গোল্লাছুট খেলা।
 

 

বিজয়ের পতাকা তব উড়বেই


সুনীল সমুদ্র
 

রক্তাক্ত 'সত্য'রা চিরকাল-ই অবিনাশী।
তুমি লিখে নিতে পারো- মৃত্যু নেই-
একফোটা- এককণাও মৃত্যু নেই-
স্মৃতিতে প্রোজ্জল সেই 'একাত্তর'- আর তার
মৃত্যুঞ্জয়ী- প্রত্যক্ষ অনুভবের।

কোন আক্রোশ, আস্ফালন অথবা নির্লজ্জ স্তুতি
পারেনা পালটে দিতে-গভীরে গেঁথে যাওয়া
দৃপ্ত স্মৃতির শেকড়- রাতারাতি-

শুধু ফুলদানী পাল্টে দিলেই,
'ক্যাকটাস' কাঁটার বদলে কেউ
পেয়ে যেতে পারে না কোনো-
স্মৃতিচারী সুগন্ধী- বিমুগ্ধ 'গোলাপ'।
তুমি লিখে নিতে পারো-
স্বাধীকার, ভাষার দাবীতে যে রক্ত
গড়ায় 'ইতিহাস' হয়ে- রাজপথে-
পঁয়ত্রিশ বছর পরেও তা' অমলিন স্মৃতির মলাটে
রয়ে যায়- সুনিশ্চিত, টকটকে লাল !

জানি- কেউ কেউ অস্পষ্ট করে দিতে চায়
আমাদের গর্বিত অনুভব।
কেউ কেউ-
একটি জাতির উত্থান, উন্মেষ-আর
রক্তাপ্লুত সবুজের নেপথ্য কথকতা
ক্রমশঃ লুকাতে চায়-
প্রখর চৈতন্য থেকে দূরে... ।

অদ্ভুত কিছু আরোপিত আধাঁর
প্রায়শঃই আমাদের চেতনার জ্যোতস্নাটুকু কেড়ে
ছূড়ে দিতে চায়-বোধশূন্যতার অতল অন্ধকারে-
সীমাহীণ অচেনা এক- নষ্ট অমাবস্যায়।

তবুও বিপুল ভাঙনের পরেও আমরা বারবার
জেগে উঠি-
বারবার যূথবদ্ধ হই- রক্তে মিশে যাওয়া সেই
অনিঃশেষ চেতনায়-
বারবার আমাদের অনির্বাণ ইতিহাস-
আমাদের নিত্য অনুভবে মিশে
হয়ে ওঠে মৃত্যুহীণ- শাশ্বত 'অবিনাশী' !

অন্য কলমে কেউ যতোই অন্যভাবে লিখুক
ইতিহাস থেকে যায়- অনন্য, অনড় গভীরে

কষ্টে, ভালবাসায়, বিশ্বাসে আর রক্তের মহিমায়-
প্রত্যক্ষ চোখের সামনে তৈরী হয়েছে যে সংগ্রামী সোনালী অতীত-
কোন কূট-কৌশলই কোনদিন পারেনা সেখানে
সহজে ঘটাতে কোন- কলঙ্কময় বিকৃতি!

আমাদের রক্তের উত্তাপে-একান্ত গভীরে
বিকাশ ঘটেছে যে গৌরবোজ্জল ভ্রুণের-
অমলিন ভীষণ ধ্রুব-সেই রক্তাক্ত 'সত্য'টুকুর
সুনিশ্চিত- কোন 'মৃত্যু'ই নেই !

তুমি দ্বিধাহীনভাবে লিখে নিতে পারো-
ইতিহাস হয়ে যাওয়া-এই ডিসেম্বরে-
এই বিজয়ের মাসে-
আমাদের প্রীতির আকাশ জুড়ে
লাল-সবুজের আবেগ মেশানো সেই
অনন্য অপরুপ সাজে-

বিজয়ের ফুল্লল পতাকা তবু উড়বেই-
দৃপ্ত দ্বিধাহীন উচ্ছাসে-
আমাদের মুক্ত নীলিমায়-
অনন্তর, অনন্তকাল।

 

 

আমার রক্তের ইতিহাস

কালপুরুষ

মাগো, একটু হাসো-
দেখি তোমায় দুচোখ ভরে।
বেহায় এই অন্ধকার আজ যাচ্ছে না কেন সরে,
চাঁদটা কেন ওঠেনি আজ জেগে,
আকাশ কেন অন্ধকারে ঢাকে?
রক্তে ভেজা শরীর আমার ঢাকবো ক্যামন করে?
বুকে আমায় চেপে ধরো মাগো,
রক্তে রাঙাই শারীর আঁচল জমাট বাঁধার আগে।
পতাকা আমার কেমন হলো লাল, দেখবে সবাই ওড়াবে যখন কাল।
বলতে পারো মাগো, এতো মেঘ কেন আজ আকাশ জুড়ে?
তুমি হাসোনি বলে কি তাই!

মাগো, একটু আদর করো-
বুকটা কেমন খা খা করে ওঠে।
বাবাতো সেই কবেই গেছে চলে,
আগলে তুমি রেখেছিলে অনেক কষ্ট সয়ে।
পারলে না তাও- পালিয়ে গেলাম, যুদ্ধ যেদিন শুরু;
বলেছিলাম আসব ফিরে, এলাম তোমার কাছে।
মাগো, গাছের পাতা শান্ত কেন আজ?
বাতাস কেন বহেনা আজ জোড়ে?
উফ্! অলুক্ষণে পেঁচাটা কেন ডাকে?
হাসি কেন দেখিনা তোমার ঠোঁটে?
রাতভর কেঁদেছো বলে কি তাই!

মাগো, একটু গান করো আজ শুনি-
কানদুটো কেমন অসাড় হয়ে আছে।
নিঃশব্দের প্রহর কেটে গুলি যখন ছোটে,
ঝাঁঝড়া হলো নিঝুম ঘুমের রাত;
উড়াল দিল পাখীরা সব মেঘে।
চাঁদটা কেন ঢাকলো গোপন বেশে?
থামলো কেন ভোরের পাখীর গান?
মাগো এতো জোনাক কেন জ্বলে?
শশ্মানটা কি ধারে কাছে কোথাও?
চিতা আমার জ্বলবে বলে কি তাই!

মাগো, কাঁদছো কেন বলো-
খোকা তোমার এসেছে আজ ফিরে।
ভাগ্য আমার এতই ভাল ছিল,
শহীদ হব আপন মায়ের কোলে।
বিঁধলো না হয় একটা গুলি বুকে,
স্বাধীনতার ফলবে ফসল দেখো-
কতই আর ঝড়াবে ওরা রক্ত এক এক করে!
আমি, তুমি আমরা সবাই সাত কোটিতো কম নই!
পারবে কি আর শেয়াল-শকুন, হায়েনার দল জোট বেঁধে?
নিত্যনতুন ফলবে ফসল আমারি ক্ষেত জুড়ে,
বলবে কথা মায়ের ভাষায় সবাই একই স্বরে।
জানবে সেদিন আমার কথা,
রক্তে রাঙ্গা বীর শহীদদের করুণ মৃত্যু গাঁথা।
মাগো তুমি দেখে নিও, আগাছা সব এক এক করে
খাবলে নেবে ওরা।
নেংটি ইঁদুর শত্রু সবার যাবেই এদেশ ছেড়ে।
শুধু তুমি চাইবে বলে তাই!

মাগো, আর যে সময় নেই-
ঘুম যে আসে জলোচ্ছাসের মতো,
যেতেই হবে এবার আমি জানি;
পাহাড়সম কষ্ট তোমায় দিলাম হাতে তুলে।
মৃত্যু আমার রইলো জমা আমার মায়ের নামে।
বলবো কথা সবাইকে আজ সময় হাতে নেই-
মৃত্যু আমার এক জনমের বাঁচার অধিকার,
পতাকা হয়ে উড়লো নাহয় তোমার শাড়ীর আঁচল।
একটু শুধু খেয়াল রেখো সবাই যেন দেখতে পায়,
স্বাধীনতার সেই পতাকা আমি এঁকেছি রক্ত দিয়ে,
তোমার ছেলে শহীদ হলো তাই।


 

 

 

৭১'গ্রামগুলোও নিরাপদ ছিলনা


নাজনীন খলিল

অবশেষে গ্রামগুলোও আর নিরাপদ রইলনা
২৬শের ভোরে শহর থেকে পালিয়ে আসা
গ্রামের সুহৃদ-স্বজনের শরণ নেয়া মানুষেরা
বিহ্বল হয়ে পড়ে--এবার কোথায় যাবো!

এইমাত্র খবর পাওয়া গেল----
গাঁয়ে হানাদার-বাহিনী ঢুকেছে
প্রাক্তন জমিদার কালীপদ চৌধুরীর বাংলো-ঘর পুড়ছে
ওরা আগেই ভারতে শরণার্থী হয়েছিল;
আগুন-টাগুন দেয়া শেষ করে--এখন ব্যস্ত আছে
একমাত্র উচ্চবিদ্যালয়-ভবনটিতে ক্যাম্পের আয়োজনে।

ইতিমধ্যে সবাই জেনেছে--
মেয়েরা তাদের কাছে গণিমতের মাল
সমর্থ পুরুষেরা শিকারের পশু--
অতএব পড়ে থাক আরাম আয়েশের ঘরসংসার
প্রাণ আগে--সম্ভ্রম আগে
পালাতেই হবে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে;
দু'এক প্রস্থ পোশাক-আশাক সম্বল করে
যে যেদিকে পারে-গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে যেতে থেকে

যেতে যেতে পিছু ফিরে-
ফেলে আসা নিজ গ্রামটিতে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে
ভাবে--
কোন ঘরে আগুন দিলো? আমার ঘরেই কি?

সেই হিংস্র-লোলুপ পশুদের
হিংস্র খুনের স্পৃহা আর লালসা চরিতার্থে ব্যর্থতার প্রতিশোধ এভাবেই ছিল।

আগুন জ্বালানোর আগে-
এদেশীয় দোসরেরা জনশূন্য ঘরগুলো লুটপাট করে নিতো।


বিশ্ব-আদালতে এখন পর্যন্ত নাৎসীরাও ক্ষমা পায়নি।

....................................................................................................................................................


 

 

মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরী

ফকির ইলিয়াস

জারুল গাছের সাথে হেলান দিয়ে রাখা স্টেনগানটা আবার হাতে
তুলে নেই। ডালে উড়ছে একটা লাল ছিন্ন শাড়ী। সামনেই শিলাদের
বাড়ী ।ও বাড়ীতে আজ আর কেউ থাকেনা।পোড়া ভিটেতে দাঁড়িয়ে
আবার দেখে নিই পৌষের আকাশ।সমাহিত মায়ের কবর আমাকে
কাঁদায় নি মোটেও । এই মুক্ত বাতাসের আলিংগন আমাকে ছুঁয়েছে,
কাঁদিয়েছে তিরিশ হাজার বধ্যভুমি।
ষ্টেনগানটিতে কোনো জং ধরেনি এখনো । আমি হাঁটতে থাকি।
এই হাওরের জল, এই জারুল ফুলে রেখে যাওয়া যুদ্ধের দাগ
খুঁজে খুঁজে দাঁড়াই ।
আবার যুদ্ধে যাবো, সৈনিককে তো ফিরে আসতে নেই !

 


পথিক

স্বপ্ননীল

প্রখর দুপুরে
তৃষিত পথিক
পথ চলে অবিরত,
এক এক করে
গত হয়ে গেছে
নদী, মাঠ-ঘাট কত ।

যুগ যুগ ধরে
যোজন পথের
মলিন চিহ্ন দেখে,
এগিয়ে চলে সে
তপ্ত রোদ আর
শ্রাবণ বর্ষা মেখে ।

চারিদিকে তার
নর কঙ্কাল
ছড়ানো ছিটানো হাড়,
ধুলি ধুসরিত
পথখানি যেন
শান্ত তবু অসাড় ।

সহসা বক্ষে
বুলেট বিঁধল
রক্তিম হলো বুক,
কত যুগ ধরে
পথ চলা শেষে
এতেই তো তার সুখ ।

আকাশের কোণে
নিযুত কন্ঠ
চিতকার করে বলে,
এস তুমি ফিরে
মুক্ত পথিক
সত্যের ছায়াতলে ।

 

৭১' বধ্যভূমির লাশগুলো


নাজনীন খলিল

যুদ্ধ যা দেয়--তার চেয়ে ঢের বেশী কেড়ে নেয়।


যে চোখ দু'টো আর কোনদিন বাংলার এই সুনীল আকাশ দেখবেনা
শরতের তীব্র বর্ণচ্ছটাময় মেঘপরী নৃত্য
রংধনু
কাশবনে শুভ্র ঢেউয়ের মাতন
রূপালী তরঙ্গ
---সেই মণি দু'টো ঠোকরানো শেষ করে
বুকের উপর থেকে এইমাত্র একটি শকুন উড়ে গেল;
এখন---
সেই দুই চোখ পিলপিলে পিঁপড়ার দখলে চলে গেছে;

পিঁপড়াতে তার খুব ঘেন্না ছিল
একবার--চায়ের কাপে একটি কালো পিঁপড়ার লাশ দেখে
পেয়ালা আঁচড়ে ভেঙ্গে দিলে--- চা-পরিবেশনকারী
তার বোন অভিমানে তিনদিন কথাই বলেনি।
তার ভাই আজ পিঁপড়ার খাবার হয়ে গেছে--বোনটি জানেনা।
আর তার মা --ছেলে ছুটিতে বাড়ী আসার দিনটিতে
রিকশার টুং টাং শব্দে দৌড়ে দৌড়ে দরোজায় ছুটে যাওয়া
সারাক্ষণ ঘর-বার, বার-ঘর করা--'খোকা এলো বুঝি'
সেই মা এখন কোথায়?

মৃত্যু-সহযাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে তার মনে পড়েছিলো
সেই বন্ধুটির কথা--- গ্রামে মায়ের কাছে পালিয়ে গিয়েও রেহাই পায়নি;
মা-বাবার সামনে বেয়োনেটে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে মারা হয়েছে।


সারিতে দাঁড়ানো ভীতু চেহারার আধবুড়ো লোকটি
দোয়া-দরূদ পড়ে আল্লাহ্‌র দরবারে প্রাণ-ভিক্ষা চাইতে চাইতে
আচমকা প্রচন্ড সাহসী উচ্চারণে-' জয় বাংলা'বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে
কাতারে সারিবদ্ধ সব ক'টি মানুষের কোরাস-ধ্বনি ওঠে
জয় বাংলা
জয় বাংলা
জয় বাংলা

এক ঝাঁক বুলেটের ধাক্কায় শব্দগুলো থেমে গেলে
কাক-শকুন,পিঁপড়া আর ভনভনে মাছির পাহারায়
ছড়ানো-ছিঁটানো লাশগুলো পড়ে থেকে।

বাতাসের রেনুতে রেনুতে মিশে থাকে তাদের শেষ উচ্চারণ-ধ্বনি।
 

..............................................................................................................................................................

 

গল্প

গল্প-কৃষ্ণপক্ষ

গাজী তানজিয়া

 

বিজ্ঞান বলিস আর সমাজ বলিস মা ই তো সন্তানের আসল পরিচয়। আমি একজন ঘৃণ্য নরপশু, যুদ্ধাপরাধী, পাকিস্তানী আর্মির ঔরসজাত ভেবে যতবার কষ্ট পেয়েছি ততবার আমার বীরাঙ্গণা মা ও তার স্বামী আমার বর্তমান বাবাকে দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি। আমি যার ঔরসজাত সে একজন ঘৃন্য পশু হলেও যার গর্ভে তিলে তিলে আমার বেড়ে ওঠা তিনি এই দেশের জন্য তার সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অমানুষিক শারিরীক ও মানসিক নির্যতন সয়েছেন। কেন জানিস? দেশ! দেশের জন্য।

..............বিস্তারিত

   

গল্প-সোনালী আভা ও একটি চিঠি

আবদুল খালেক

 

সম্পর্কের ধারা ধরেই আমরা মনের কথা বলি । সব সময়ে সব কথা সবাকে বলা যায় না। এমনও অনেক কথা আছে যা কাউকেই বলা যায় না। যা ধরে রাখতে হয় অতি গোপনে, চাপা কান্না দিয়ে ঢেকে। মুখের হাসি দিয়ে লুকাতে হয়-চাপা কান্নার এসব শব্দ গুলোকে। ১৯৭১ সালের ডাইরীর কিছু পাতা আমি মাঝে মাঝে পড়ি। গোপনে পড়ি। পড়তে পড়তে উঠে গিয়ে কখনও চোখ ধুঁয়ে আসি। কেউ যেন বুঝতে না পারে চশমার আড়ালে আমি কেঁদেছি।

...........................................................................................

...............বিস্তারিত

 

 

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ধারাবাহিক উপন্যাস

প্রতীক্ষা

 

ফিরোজা হারুন

 

মুক্তি যুদ্ধের বেশ কিছুকাল আগের সময়। তখন আমরা কলেজ হোস্টেলে থাকি। সে সময় মেয়েদের ঘরে বাইরে এমন যত্র-তত্র বিচরণ ছিল না। চলাফেরা ছিল অনেক সীমিত। হোস্টেলের মেয়েরা ছিল বন্দী। একই কম্পাউন্ডে স্কুল-কলেজ, হোস্টেল। বড় বড় ছুটিতে মেয়েরা বাড়ি যেত। তাও পিতা অথবা পিতা কর্তৃক নির্দিষ্ট গার্জিয়ানের সঙ্গে। পুনরায় ছুটি শেষে হোস্টেলে পদার্পণ। এভাবেই কেটে যেতো ছাত্রীজীবন। সেজন্য মেয়েদের হোস্টেলের বাইরে চিত্তবিনোদনের একমাত্র উপায় ছিল বনভোজন। সকলের জন্য নয়। নাইন-টেন, এবং কলেজের ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার এর ছাত্রীদের জন্য। আশায় আশায় দীর্ঘকাল পার হয়ে শেষে নাইন-টেনে এসে বনভোজনের সুযোগ পেলাম।

 

পিন্টুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল সেই বিজন বনে --- মধুপুর গড়ে। না হলেও পারতো! কিন্তু হয়েছিলো। এ যে আমার নিয়তি, আমার অদৃষ্ট! নিতান্ত নাটকীয়ভাবে আমার জীবনে সুখ এসেছিল, স্বপ্ন এসেছিল। নাটকের মত হল তার অন্তর্ধান। একটি সাধারণ ঘটনা জীবনের মোড় এমনভাবে ঘুরিয়ে দিতে পারে, তা ছিল কল্পনার অতীত। তবুও তাই ঘটেছিলো। তারপর জীবনের নানাঘাত প্রতিঘাত, চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে আজ বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু সেদিনটির সেই ঘটনা আজও অন্তরের অন্তঃস্থলে উজ্জ্বল হয়ে জেগে আছে। সে দৃশ্যটি বিস্মৃত হওয়ার প্রয়াস পাইনি কখনও। কেন বিস্মৃত হবে তার কথা! সে যে আমার ভালবাসার, ভাল লাগার, বেদনার, জন্ম জন্মান্তরের আরাধনার লব্ধ সম্পদ। তাকে তো উপেক্ষা করতে পারিনা। তাই তো স্মৃতির বীণায় আজও তারই কথা ফিরে ফিরে বাজে।

 

..............বিস্তারিত

প্রবন্ধ

 

হাজার বছর ধরে বাঙালিত্বের বিকাশ ঘটেছে ধীরে-ধীরে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ফরায়েজি-সহ অন্যান্য ইসলামি সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে বঙ্গে মুসলমানিত্বের উত্থান ঘটেছে। পাকিস্তান গঠিত হয়েছিলো মুসলমানিত্বের ভিত্তিতে, আর বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিলো বাঙালিত্বের ভিত্তিতে। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আত্মপরিচয়ের এ-দুই ধারাই চালু আছে। মোটা দাগে বড়ো দুটি দলের মাধ্যমে। তবে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সময়ে এ-দুই ধারা বিবাদমান ও প্রায়শঃ দলীয় সহিংসতা পর্যন্ত গড়ায়। বলা বাহুল্য, বাঙালিত্বের ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মুসলমানিত্বের অনুসারীরাই বেশিরভাগ সময় দেশ শাসন করেছে এবং বিগত জোট সরকারের আমলে তারা প্রভূত আস্কারা পেয়েছে ও শক্তি অর্জন করেছে।...

যাহোক, অন্যান্য মাধ্যমের মতো চলচ্চিত্রে লোক-ধর্মকে উপেক্ষা করা হলেও বাঙালিত্ব ও মুসলমানিত্বের দ্বন্দ্বের বিষয়টি ভালোভাবেই এসেছে। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক চলচ্চিত্রে এটা প্রকটিত হয়ে ওঠে।...

এ-সব চলচ্চিত্রে সাধারণত এরকম একটি রাজাকার চরিত্র থাকে, যেটি সাধারণত শান্তি-কমিটির সদস্য হয়ে থাকে এবং যার কাজ হলো আক্রমণকারী পাকিস্তানী মিলিটারিকে সহায়তা করা -- যা কি-না মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীকে নারীসরবরাহ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা একটু বয়ষ্ক ও সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী-টুপি পরিহিত, এদের মুখে দাড়ি থাকে -- অর্থাৎ রাজাকার ও মোল্লা এভাবে সমার্থক হয়ে ওঠে।...

 

............বিস্তারিত

 

রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে মৌলবির বিবর্তন

ফাহমিদুল হক

 

মুক্তিযুদ্ধের ই-বুক

যাদের রক্তে মুক্ত এ দেশ

 

আর্কাইভ

 

Best view with Microsoft Internet Explorer

font download link

http://omicronlab.com/download/fonts/SolaimanLipi_20-04-07.ttf