ক্রস কানেকশান ও সম্পৃক্তি!
অরূপ সুপ্রতীক ঘোষ

আজ ৯ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৮।
সকাল থেকে মনটা ঠিক খারাপ কিনা তাও বুঝতে পারছেনা সে। ষাটেও সুবুদ্ধি সেনশর্মার শরীর ও মন এমনিতে ভালই থাকে। মনে, মননে ও শরীরে ভরপুর যুবক। “আমি তো খারাপ থাকিনা” এই উত্তরই পেয়ে থাকে কেউ জানতে চাইলে কিম্বা নিজের সন্দেহ হলে এটাই তার সংক্ষিপ্ত ও তাতক্ষণিক উত্তর।
একটা অচেনা নাম্বার থেকে সকাল আটটা নাগাদ ফোনটা এল। তারপর থেকে থেকেই মন বার বার চলে যাচ্ছে তার, ১৯৯২ এর ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায়।


কলকাতার পিজি হাস্পাতালের ম্যাকেঞ্জী ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন বাল্যবন্ধু দেবলের বাবা। ডক্টর সুনীল ব্যানার্জী। খুব সম্ভবত ১৫ কি ১৬ ডিসেম্বর হবে। সারাদেশ ফুঁসছে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে। পক্ষে কমই। বিপক্ষেই বেশী সরগরম মানুষ। ও’পারে চট্টগ্রামে চট্টেশ্বরী জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই নিয়েও তর্ক বিবাদ আলোচনা পথে ঘাটে খবরের কাগজে, সর্বত্র। দেবলের বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এক অদ্ভুত কারণে। আজ পঁয়ত্রিশ দিন হল উনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। প্রায় চল্লিশ বছর দক্ষিণ কলকাতায় ডাকসাইটে ডাক্তার হিসেবে প্রাকটিস করেছেন। এই ম্যাকেঞ্জী ওয়ার্ডেই জুনিয়ার ডাক্তার হিসেবে কাজ করেছেন পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়। ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের আজীবন সভ্য। যৌবনে খেলতেন ক্রিকেট আর নেশা বরাবরই ক্লাব ও ক্লাবের ফুটবল। একটা খেলাও বাদ যেতনা। এই মেশোমশাইএর দৌলতে সুবুদ্ধির অনেক খেলা দেখা মাঠে গিয়ে। একমাসের ওপর কাছাকাছি উনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন আর ওজন কমছে, কমেই চলেছে। এখন কথাও বন্ধ। কেমন ফাঁকা একটা দৃষ্টি দিয়ে চারদিক দেখেন কিন্তু কিছু বলেননা।


দেবলের ট্যুরের চাকরী। মাসিমা দু’বেলা হাসপাতালে আসতে পারেননা। তাঁরও বয়স হয়েছে। সুবুদ্ধি ওনাদের আরেক ছেলে হিসেবেই বড় হয়েছে। সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে বেরিয়ে সুবুদ্ধি চলে আসে হাসপাতালে। যতক্ষণ সম্ভব ওখানেই থাকে। কি জানি কখন কি দরকার হয়। ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। বিরাশী কিলো ওজনের মানুষটা এখন প্রায় বিছানায় লেগে আছেন।


সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে সুবুদ্ধি ভাবল আজ রাতটা কাটবে কিনা সন্দেহ। ডাক্তারও তাই বললেন। নাড়ীর গতি এত ক্ষীণ যে খুঁজে পাওয়াই মুস্কিল। ভিজিটিং আওয়ার শেষে আরও অনেকে সিঁড়ি নামছে। সেই ভীড়ের সিঁড়িতে সুবুদ্ধিও পা রেখেছে। রোগ বৃত্তান্ত ছাপিয়ে বাবড়ি মসজিদ নিয়ে আলোচনা কানে আসছে। সুবুদ্ধি কেমন হারিয়ে আছে স্কুল কলেজের দিনগুলোতে। দেবলদের জুবিলীপার্কের বাড়িতে মেশোমশায়ের সাথে রাত জেগে সাদাকালো টিভিতে ১৯৮৩’র বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা দেখা। ২৫শে জুনের রাতটা এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। কপিল দেবের দল দেশকে প্রথম বিশকাপ জেতালো। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা। মাসিমা চা কফির জোগান দিচ্ছেন। মেশোমশায়ের একটার পর একটা ফোর স্কোয়ার সিগারেটে টান আর সুবুদ্ধির কানে মেশোমশায়ের প্রিয় ট্র্যানজিষ্টার। টিভিতে ভীষণ চিতকারে কিছুই শোনা যাচ্ছেনা তাই সুবুদ্ধি দায়িত্ব পেয়েছে ঘরের মধ্যে রিলে কমেন্ট্রী করার। ভারত যেই জিতেছে সুবুদ্ধি উত্তেজনার আতিশয্যে হাতে ধরা ছোট্ট ট্র্যানজিষ্টার ছুড়ে মারল ঘরের ছাদে। ভাগ্যিস সেদিন ভারত জিতেছিল নইলে মেশোমশায়ের প্রিয় ট্র্যানজিষ্টর রেডিও ভেঙ্গে ফেলা তো দুরের কথা হাত দিলেই ধুন্ধুমার কান্ড, ভীষণ বকা খেতে হত। কি গুরুগম্ভীর গলা ছিল ওনার আর আজ উনি নির্বাক।

 নীচে নেমে রোজকার মত মাসিমাকে Update দিতে পিলারের গায়ে ঝুলন্ত পয়সা ফেলা কালো ডাব্বা ফোনের হাতলটা তুলে ডায়াল করল 426387... ক্রসবার ফোন। কুঁগ কুঁগ শব্দ করেই চলেছে। তৃতীয়বারের চেষ্টাই অপর প্রান্তে রিং শুরু। বেশ কিছুক্ষণ পরে অপরপ্রান্ত থেকে এক মিষ্টি সুরেলা কন্ঠ।

“হ্যালো চৌধুরীস স্পিকিং”।

সুবুদ্ধি ঘাবড়ে গিয়ে ফোনটা কেটে দিল। একটা কয়েন গেল। আর তিনটে আছে। আবার ডায়াল করল। এবারে দু-তিনটে রিং এর পরেই সাড়া এল “হ্যালো চৌধুরীস স্পিকিং”। মাসিমা এভাবে কথা বলেননা আর ওরা ব্যানার্জী।

সুবুদ্ধি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমতা আমতা করে বলল আমি মনে হয় ভুল নম্বর... ওপার থেকে ততধিক সুরেলা কন্ঠে – “ওহ তাই”! পরের কয়েনটাও গেল। এবারে সুবুদ্ধি বেশ যত্ন করে ডায়াল করল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর। তবে এবারে আর হ্যালো চৌধুরীস স্পিকিং নয়।

“এই শুনুন ফোনটা কাটবেন না। আপনার গলাটা দারুন ভাল লেগেছে আমার। আমি পারমিতা”। সুবুদ্ধি চুপ করে আছে।

“একটু কথা বলুন” পারমিতার সানুনয় অনুরোধ।

সুবুদ্ধি গুছিয়ে আসল ঘটনাটা ব্যাখ্যা করল। “দেখুন আমি পিজি হাসপাতাল থেকে ফোন করছি বাড়িতে খবর দেবার জন্য। কিন্তু বারবার আপনার নম্বরে কি করে যাচ্ছে আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা। মাফ করবেন”।

ওপার থেকে, “না না মাফটাপ কেন বলছেন। বেশ লাগে আপনার হ্যালোটা, জানেন”। সুবুদ্ধি কিংকর্তব্যবিমুঢ়।

পারমিতা বলে চলে, “আপনি কত নম্বর ডায়াল করেছেন?”

সুবুদ্ধি উত্তর দেয় “426387”, ওপার থেকে “ওহ কিন্তু আপনিতো পৌঁছে গেছেন 752162 তে... তা এসেই যখন গেছেন তখন একটু থাকুন না প্লীজ”।

সুবুদ্ধি ভাবল এই সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় উনি কি নেশা করেছেন! বেশ বিনীতভাবে সুবুদ্ধি বলল, “দেখুন আমি আগে বাড়িতে খবর দিই তারপর না হয় আপনাকে কল করব। আপনিতো নাম্বার বলেই দিলেন”।

পারমিতার জেরারী প্রশ্ন, “মনে থাকবে?”

জেরার উত্তরে সুবুদ্ধি বলে, 'দেখুন আমার চার বছর বয়েসে জানা বড়মাসীর বাড়ীর ফোন নাম্বার 472242 যা আমি কোনও দিন ডায়াল করিনি। মামাবাড়ীর নাম্বার ছিল 461032 যা আমি কখনও ডায়াল করিনি। সংখ্যা ভালই মনে থাকে।'

 উচ্ছ্বলা পারমিতা, “আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকব”; মনে হল পারমিতা বিশ্বাস করেছেন সুবুদ্ধির কথা। ফোনের হাতলটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে প্রায় ছিটকে সরে এল সুবুদ্ধি ঐ ডাব্বাফোনের কাছ থেকে; মনে মনে বলল “অনেক হয়েছে”। সোজা ফিয়াট গাড়ী চালিয়ে মাসিমার কাছে পৌঁছে গেল সে।

মাসিমার সুবুদ্ধির মুখ দেখে জড়ানো গলায়, কান্নাভেজা প্রশ্ন। “কি রে কি হয়েছে, নেই?” সুবুদ্ধি ধাতস্থ হতে হতেই বলল – “না মাসিমা একই রকম। আজ বিকেলে দু’ চামচ হরলিক্স খাওয়ানো গিয়েছে”। একদিকে মাসিমাকে আশ্বস্ত করা আরেক দিকে পারমিতার কন্ঠ, তার আহ্বানী কথার উচ্ছ্বলতা; এর মধ্যেই এক কাপ চা খেয়ে সুবুদ্ধি বাড়ি ফিরে গেল গরচা রোডে। পরের দিন আবার ভিজিটিং আওয়ারের পরে নীচে এসে আবার সেই কালো ডাব্বাফোনের হাতল ধরে কয়েন রেডি করে ডায়াল শুরু। কিচ্ছুক্ষণ রিং হবার পরে সেই সুরেলা মাদকিয়া কন্ঠ।

“বলুন, কাল আপনি কথা রাখেননি। আজ কিন্তু কথা বলতেই হবে”।

সুবুদ্ধির মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, “আপনি কি এই রঙ নাম্বারের জন্য ফোনের কাছে বসেছিলেন?”

ও কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেনা কি করে একেবারে আলাদা দু’টো নাম্বার একই জায়গায় যাচ্ছে বার বার তাও আবার চব্বিশ ঘন্টা পরেও। রঙ নাম্বার বা ক্রস কানেকশান হয়, তবে এরকম? সুবুদ্ধি বলল, “বলুন কি শুনতে চান”।

পারমিতা যেন বুকের ওপরে আছড়ে পড়ল, “কি আবার আপনার গলা। কাল থেকে আমার কানে মনে প্রাণে বিরাজ করছেন আপনি আর আপনার কোনও সাড়াই নেই, আপনি আমার বন্ধু হবেন?”। বলেই গুনগুন করে গাইতে লাগলেন – “ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে...” বেশ গানের গলা। ভাল লাগতে শুরু করেছে সুবুদ্ধির। বিরক্তি বা কোনও মতামত তৈরী হচ্ছেনা আর। প্রায় মিনিট পনেরো কথা হল। সুবুদ্ধির হালকা ইঙ্গিতপূর্ণ কথার উত্তরে পারমিতা জানাল সে পাগল নয় বা সে নেশাভাং করেনা, সে সত্যিই সুবুদ্ধিকে বন্ধু হিসেবে চায়। কোথায় যেন একাকীত্বের হাহাকার পারমিতার মনে।

Paramitaপারমিতা কিছুটা তথ্য সরবরাহের মত অতি নির্লিপ্ত কন্ঠে জানাল যে সে স্বাভাবিক একজন নারী, স্বামী বুদ্ধদেব চৌধুরীর সঙ্গে কোনও মানসিক আদান প্রদান নেই তাই সুবুদ্ধির গলা শুনেই বন্ধু পেয়ে গেছেন ভেবে অতটা উচ্ছ্বল হয়ে পড়েছেন। এরপর এও জানা গেল যে পারমিতাও থাকে গরচা রোডেই, পাশের গলিতে। সুবুদ্ধি অনুতসাহী কন্ঠে জানতে চাইল, “আচ্ছা এই “হ্যালো চৌধুরীস স্পিকিং” বলা কি আপনার ষ্টাইল?” পারমিতা যেন অপেক্ষায় ছিল, ''না, ওটা ব্রিটিশ অক্সিজেন এর কর্তা বুদ্ধদেব চৌধুরীর আদেশে বলতে হয়, এমনিতে ঘরে লুঙ্গি পরে আদুল গায়ে থাকে। আমার খুব হাসি পায় যখন ও কাউকে লুঙ্গি পরে সোফার ওপরে পা তুলে ফোনে বলে হ্যালো চৌধুরীস স্পিকিং... আমিও তাই বলি, আর কত ছ্যাঁকা মার খাব বলতো? সরি বলুনতো।'' সুবুদ্ধি কি বলবে বুঝতে পারেনা।

ওদের মধ্যে প্রায়ই সন্ধ্যেবেলা ফোনে কথা হত। ওই সময়ে বুদ্ধদেব বাড়ীর কাছে AAEI ক্লাবে যেত রোজই। কিন্তু কোনও দিন দেখা হয়নি। পারমিতার বাড়ি থেকে একা বেরনোর অনুমতি ছিলনা। স্বামীর আদেশ না মানলে চড় থাপ্পড়, কখনও কখনও সিগারেটের ছ্যাঁকা উপহার পেত। এই ভয়ে কখনও দেখা করার কথা বলেনি পারমিতা কিন্তু ফোনে সে এত আপন এত খোলামেলা যেন এক উচ্ছ্বল ঝর্ণা। মাঝে মাঝে ওর মেয়ে, তখন খুব ছোট, মায়ের থেকে ফোন নিয়ে বলত “হ্যালো বন্ধু আঙ্কল”। সুবুদ্ধিও সাড়া দিয়ে বলত “হ্যালো আমার কণিষ্ঠতমা গার্লফ্রেন্ড মিটকি” তারপর দুজনেই কলকলিয়ে হাসতে থাকত।

সুবুদ্ধি পারমিতার ফোন যোগাযোগ মাস চারেক পরেই কেটে গিয়েছিল। কারণ একদিন ওর স্বামী প্যারালেল লাইনে শুনেছিল সুবুদ্ধির কথা যার মধ্যে গোপনীয় বা আপত্তিকর কিছুই থাকতনা কিন্তু তার স্বামী-সম্রাটের অনুকম্পার তালিকায় এই অপরাধের ক্ষমা ছিলনা। এরপর একদিনই পারমিতা ফোন করেছিল অল্প সময়ের জন্য। জানিয়েছিল গরচা রোডের বাড়ি প্রোমোটিং করে বুদ্ধদেব তড়িঘড়ি তিলজলার দিকে ফ্ল্যাট কিনছে। গরচায় সে দুটো ফ্ল্যাট পাবে। ভাড়া দিয়ে দেবে। পয়লা বৈশাখ মানে পনেরোই এপ্রিল গৃহপ্রবেশ। নতুন বাড়ির ফোন নম্বর আলাদা হবে। পরে ফোন করে জানাবে বলেছিল। তা আর হয়নি। সুবুদ্ধিও সময়ের সাথে সাথে পারমিতার নৈঃশব্দে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।
সকালের ফোনটা সব কেমন গুলিয়ে দিয়েছে। ছাব্বিশটা বছর কেটে গেছে একবারও পারমিতা আসেনি সুবুদ্ধির চেতনায়! ঠিক তা’ নয়, এলেই বা সুবুদ্ধি কি করতে পারত। ওদের মধ্যে একটা নির্মল বন্ধুত্ব হয়েও হয়নি।

ফোনটা এসেছিল সুবুদ্ধির মোবাইলে। অচেনা নাম্বার। প্রথমবার ধরেনি অচেনা নাম্বার দেখে। দ্বিতীয়বার বাজাতেই ফোনটা ধরল।
সুবুদ্ধিঃ হ্যালো
অন্যপারেঃ আমার ছোট বেলায় শোনা হ্যালো একটুও বদলায়নি। আপনি বন্ধু আঙ্কল তো। আমি পরমা। মানে যাকে আপনি মিটকি বলে জানতেন পঁচিশ ছাব্বিশ বছর আগে।
সুবুদ্ধিঃ হ্যাঁ, মানে তুমি... মিটকি... কি করে, কি... কি করে এত বছর পরে... তুমি...
পরমাঃ মা তিরিশে জানুয়ারী চলে গেছেন। আমার ষোল বছর বয়েসে মা আমাকে একটা পেন্সিল স্কেচ দিয়ে বলেছিলেন। এনাকে আমি কখনও দেখিনি তবে ইনি দেখতে ঠিক এমনই হবেন। আমার খুব ভাল বন্ধু। কখনও দিশেহারা মনে হলে যোগাযোগ করো।
সুবুদ্ধিঃ কি করে...
পরমাঃ ক্যান্সার। বাবা অন্য পিসিকে নিয়ে লিভ ইন করতে শুরু করার পর মা চাকরী করে আমাকে বড় করেছেন। আমি সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে শুরু করেছি। মাঝে মাঝেই মা আপনার কথা বলতেন, মিটকি তোর মনে আছে সেই বন্ধু আঙ্কলকে?
সুবুদ্ধিঃ আমার নাম্বার পেলে কি করে...
পরমাঃ ফেসবুক। মায়ের আঁকা ছবিটা হুবহু আপনি। শুধু ওপর মহলে অনেক খালি জায়গা বেড়েছে। আপনার অনেক আগের একটা ছবি আছে প্রোফাইলে। মা আপনার গলা শুনে কি করে এতটা পারফেক্ট এঁকে ছিলেন জানিনা।
সুবুদ্ধিঃ তারপর...
পরমাঃ ফেসবুকে আপনার ওয়েবসাইটের নাম পেলাম আর সেখান থেকে আপনার নাম্বার।
সুবুদ্ধিঃ মিটকি আমাকে মায়ের একটা ছবি দেবে?
পরমাঃ দেব। বন্ধু আঙ্কল, আমি মায়ের কাজ করব পরশু মানে এগারোই ফেব্রুয়ারী, আপনাকে আমার পাশে থাকতে হবে। বাবাকে জানাইনি। জানাবনা। আর হ্যাঁ আমি এগারো দিনেই কাজ করব। মা আমাকে বলত “তুই আমার মেয়ে আর ছেলে একসঙ্গে”...
সুবুদ্ধিঃ কোথায় হবে, কাজ?
পরমাঃ রাসবিহারীর মোড়ের কাছে শ্রীচৈতন্য রিসার্চ ইনষ্টিটিউট – সেখানে। সকাল আটটা থেকে বারোটা। আপনি কি একটু আগে আসবেন? আমরা দুজনে মিলে মায়ের ছবি আর আসনটা সাজাব।
সুবুদ্ধিঃ আসব...
সুবুদ্ধি গভীর ভাবের মধ্যে ডুবে থাকে, এ কি ক্রস কানেকশান ছিল, না কি এক সম্পৃক্তি... একটি গোটা জীবনের!

***