নব আলোকে বাংলা

উত্তরাধিকার। অঙ্গীকার। দূরদৃষ্টি।

 

সম্পাদক

সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ

পাঠক পরিষদঃ শুভলগ্না শোয়ারা,চঞ্চল চৌধুরী

 

শুভ প্রেমাঙ্কুর দিবস সংখ্যা

 

সম্পাদকীয় ছন্দাবলী -২২


যুগলে আজ ঘুরে বেড়ান যুগলে সব দেখা
পার্ক রেঁস্তোরা কিম্বা ফাঁকা ড্রয়িং রুমের সোফা

যুগল থেকে কনজুগ্যাল হয়ে ওঠার প্রথম পদচারণা...
নীরব থেকে সরব হতে চায় আন্দোলিত মনের রঙ্গিন ডানা
নবীন প্রবীণ প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক প্রেমের নবতম অঙ্কুর
ভালবাসি ভালবাসি হোক না বয়স যত চায় - মন তো অভঙ্গুর

সাধু ভ্যালেন্টাইনের দিন মনে প্রাণে সাজ সাজ
অনেক মিল অমিলের মিলন হয়ে থাকে আজ
পরিচিত অপরিচিত অনেকে যুগলে আছেন এই দিন থেকে
দীর্ঘ পথ একসাথে সময়ের চড়াই উতরাই পাশে পাশে চলা...

প্রথার ইতিহাস বা প্রচলন যাই হোক
দিনটি বেশ একটা মিষ্টি রেওয়াজ এনে দেয়
উচাটন মনে আনন্দের সুখ ও দ্যোতনা দুইই থাকে
বেশ বেশ বেশ এই ভাল এগিয়ে চলুক সকল যুগল
হয়ত একসাথে পাশে পাশে কিম্বা সমান্তরাল রেখায়
চলুক জীবনে রবীন্দ্রনাথ থেকে নচিকেতা গান
চলাই তো জীবন শুভ প্রেম অঙ্কুরিত হয়ে প্রীতা হোক মন

শুভ প্রেমাঙ্কুর দিবসের ভালবাসা, শুভেচ্ছা ও প্রার্থনা রইল সবার জন্য...

অরূপ
 ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১

১ লা ফাল্গুন, ১৪১৭

 

***

 

দোঁহাত্মা মিলন দিবস

কত কি যে মনে পড়ে
কত কি যে আছে জুড়ে
মন তুমি থাক অনাম্নীর চিত্ত সাথী হয়ে
কত ভাবনা আসে ফিরে আমার হয়ে
কত সুখ স্বপ্ন মনের গোপনে জারিতা
তুমি মোর রঙ্গীন প্রজাপতি অপরাজিতা...
মনে পড়ে যায় তুমি এলে এক দুর্বার খরায় ফুটিফাটা পথে
সেই আঠেরো তখনও দাপাদাপি করেছে এই তৃষ্ণার্ত বুকে...
তুমি এলে মোর চিত্তাশ্রমে সহজাত ঈষতঃ নারীসুলভ লজ্জাবনতা
ছন্দময়ী পদ্মিনী তুমি, মোর পানে না দেখা তব দিঠি আনতা

সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আজও বুকে দ্রিমি দ্রিমি বাজে সর্বদা...
সুখ অনুভূতি প্রতি পল অনুপল বিপলে অন্তরে পড়ে আছে বাঁধা
মন আমার শুধু তোমার জন্যে আজও অকালে বাদল নামে
হঠাতই তোমার জন্যে লেখা নদীর যৌবনের ঘাটে কবির নাও থামে
তোমার রসেই তরতরিয়ে প্রেমের নৌকো যায় বেয়ে...
ভালো থেকো ভালো রেখো সারা বছর এ'মুখ পানে চেয়ে...

অনাম্নী স্বাক্ষর
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১

 

***

 

ভালবাসার গল্প

 

দুজন দুজনার
ফিরোজা হারুন


কাপ্তাই লেক দেখবো বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। পথে একটি বড় বাসকে সাইড দিতে গিয়ে আমাদের ছোট বাহনটি উলটে যায়। অতর্কিতে টাল সামলাতে না পেরে পথপাশে কোথাও পড়ে যাই। তারপর আর খেয়াল নেই। যখন চোখ মেলি, দেখি একটি মুখ আমার মুখের উপর ঝুঁকে আমাকে ডাকছে। চোখ বন্ধ করে ফেলি। আবার তাকাই। দেখি স্বপ্ন নয় বাস্তব! ছেলেটি প্রাণপণে আমাকে ঝাঁকাচ্ছে।
-এই যে, এই যে তাকান। তাকিয়ে দেখুন আপনার কিছুই হয়নি। আপনি ভাল আছেন।
আমি চোখ মেলে এক ঝটকায় উঠে পড়তে চাইলাম। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ। একটু শক্তি সঞ্চয় করে উঠে বসলাম। অপ্রস্তুত আমি। যার কোলে মাথা রেখে এতক্ষণ ছিলাম তাকে ধন্যবাদ জানালাম। সে বললো,
- এমন কিছু করিনি। আপনি একা। সঙ্গে কাউকে দেখছি না। পথপাশে পড়ে আছেন। তাই এটা আমার দায়িত্ব আপনাকে দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন কয়া। ভাগ্য ভাল আপনার তেমন কিছু হয়নি। প্রচন্ড শকে আপনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন। আমি তবে যাই এখন? আপনার নামটা জানতে পারি কি?
- আমার নাম আন্না।
- আন্না? আর কিছু না? অদ্ভুত বটে!
-কেন আগে শোনেন নি?
- নাহ! বিশ্বাস হচ্ছে না।
- এই তো আমি আন্না। টলস্টয়ের লেখা আনা কারেনিনার নাম শোনেননি?
-ও আচ্ছা! তবে ঠিক আছে।
- আপনার নামটি তো জানা হলো না।
- আমার নাম ক্রিস। কৃষ্ণা কানাইয়া।
-দুষ্টুমী করছেন?
-না । তবে একটা নাম আছে খাতায়। খুব জমকালো। তাই এই নামেই সবাই ডাকে।
- কি নাম সেটা? অদৈত মল্ল বর্মন নয়তো?
- হেসে বললো, না, মোহাম্মদ জাকারিয়া খান।
সেদিল আর কাপ্তাই যাওয়া হলো না। একটি অটোরিক্সায় উঠে বাসায় ফিরে এলাম। এরমধ্যে বেশ কিছুকাল কেটে গেল। আমি ঢাকায় গ্রামীন ফোনে কাজ করি। হঠাত একদিন দেখি সেই চেনা মুখ। একটি দেরি হলেও সে চিনলো। মৃদু হেসে বললাম, কি করতে পারি? তার সমস্যার কথা শুনে তাকে অন্য একজনের কাছে নিয়ে গেলাম। কাজ শেষে সে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল। আমার যেন কেমন সব ওলোট পালোট হয়ে গেল। বুকের ভেতর ঝড় উঠলো। কেবলই তার কথা মনে পড়ছে।
বাসায় এলাম। নানা কাজে মন দিলাম। তবুও রেহাই নেই। কি যে করি, কোথায় যাই, কাকে বলি, কোথায় তার দেখা পাই! দিন দিন যেন অসুস্থ হয়ে পড়ছি। কিছুই ভাল লাগেনা।
হঠাত একদিন ও আবার অফিসে এসে হাজির । আনন্দে আমার ‘বক্ষ মাঝে চিত্ত আত্মহারা, নাচে রক্তধারা।‘ বললাম,
-আবার কি সমস্যা।
বললো,
-এবার সমস্যা গুরুতর। ফোন নাম্বার মনে থাকছে না। তাই ভাবলাম কোথাও রেখে আসি। তার মানে এই ধরুন আপনার কাছে রেখে যাই। ভুলে গেলে আবার এসে নিয়ে যাব।
বুঝলাম দুষ্টুমী করছে। বললাম,
-আমি যদি ভুলে যাই। তখন কি হবে?
-লিখে রাখেন তবেই আমার উপকার হবে।
আমি সানন্দে ফোন নাম্বার লিখে নিলাম। সে চলে গেল। একটু পরেই ক্রিসকে ফোন করে জানতে চাইলাম,
-আপনার নাম্বার ঠিক আছে তো? তাই পরখ করে দেখছি। বিরিক্ত বোধ করেন নি তো?
- করেছি বটে তবে বেশী নয়। মাঝে মাঝে এরকম বিরক্ত করলে খুশী হব।
এরকম ছোটখাট কথোপকথন হতে থাকে প্রায়ই।
আমার কি হয়েছে? তাকে দেখার জন্য আমার আঁখি দুটি ব্যাকুল হয়ে ফেরে। ফোনে বললাম, অমুকদিন, সেইসময়, বাণিজ্য মেলার গেইটে থাকবেন। গিয়ে দেখি ঠিক অপেক্ষা করছে। ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরি পরম সুখে! কিন্তু তা তো হবার নয়।
-চলুন ভেতরে।
ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু দেখলাম। খাবার খেলাম, গেইটের কাছে ফেরতও এলাম। সে বললো,
-বাজার সে গুজারা, লেকিন কুছ খারিদা নেহি।
চমকে উঠে বললাম,
-ওরে বাপরে আপনি তো দেখি মির্জা গালিব! অনেক গুণ আপনার!
হেসে বললো,
-আরো গুণ আছে!
প্রায়ই আমাদের অভিসার চলতে থাকে বিভিন্ন মার্কেটে, মেলায়, বোট্যানিকাল গার্ডেনে। আমরা যেন একজন আরেকজনের আত্মায় মিশে গেছি। কিন্তু একবারও বলা হলনা, ‘ভালবাসি।’ এখন আমরা হাত ধরে হাঁটি।
ক্রিস আমাকে একদিন বললো,
- কাল ভ্যালেন্টাইন্স ডে, মনে আছে তো?
- বললাম, নাহ্‌ ! মনে নেই তো।
- মনে করিয়ে দিলাম। দেখ না চারিদিকে কেমন সাজ সাজ রব। যেন মহা মানবের মহা মিলনের মহেন্দ্রক্ষণ জাগ্রত দ্বারে। রঙ বেরং এর জুটিরা সব প্রজাপতির মতো হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। সর্বত্র, বিশেষ করে এই রমনার উদ্যানে। আমরা আলোর পাখি। এই রমনার উদ্যানে, এই ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে এসেছি গন্দম বৃক্ষের ফল টেস্ট করতে। আগামীকাল থেকে আমরা মানুষ হয়ে যাব। কাল তোমার জন্য লাল গোলাপ নিয়ে আসব।
আমি বললাম,
- বাগানের গোলাপ, নাকি কাগজের?
- কাগজের। দিনের পর দিন কাগজ কেটে নিজের হাতে মনের মাধুরী মিশিয়ে পাপড়ি রেণু তৈরি করে, এক সাথে গেঁথে ফুল বানাবো। তারপর গোলাপের সুবাস মাখিয়ে তোমার জন্য নয়ে আসব। সে ফুলের পাপড়ি তাজা থাকবে শুকাবে না। ঝরে যাবে না। সুগন্ধ আমার কথা বলবে তোমার কানে কানে। সেটাই তো ভাল।
- না ভাল নয়। আমি চাই তাজা গোলাপ। ভারি ভেলভেটের মত কালচে লাল পাপড়ি, সকালে ফুলদানির চারিপাশে পড়ে থাকবে। তার থেকে বড় বড় পাপড়ি তুলে আমার কৃষ্ণা কানাইয়ের নামটি যত্ন করে লিখে রেখে দেবা আমার মনের মন্দিরে, সঞ্চয়িতার পাতার ভেতরে আর ডিকশনারিতে।
- ডিকশনারিতে? কেন?
-সেখানে আমি যখন তখন তোমার নামের অর্থ খুঁজি, বানান দেখি!
-অবাক কান্ড! আচ্ছা দেখা যাবে কাল ভালবাসা দিবসে!
পরের দিন রমনা গার্ডেনে নির্দিষ্ট সময়ে আন্না আর ক্রিস হাজির। লাল গোলাপের বিরাট তোড়া দেখে আন্না বিস্ময়ে বলে উঠলো, এটাতো হাজার গোলাপের তোড়া! ভাবতে পারছি না কিছুই!
ক্রিস বললো,
-আজ পৃথিবীতে যত ফুল ফুটেছে সব তোমার জন্য, সব তোমাকে দিলাম আন্না, বলে নতজানু হয়ে ওকে অভিবাদন জানাবার সময় আন্না তাকে জড়িয়ে ধরে তুলে নিল। অনামিকায় ক্রিসকে দেবার জন্য একটি গোলাপের পাপড়ি যুক্ত সোনার আংটি এনেছিল। সেটি আর দেবার সুযোগ পেলনা। ততক্ষণে আন্না ক্রিসের আলিঙ্গন পাশে আবদ্ধ। আন্নার দুবাহু বেষ্টন করে রেখেছে ক্রিসকে স্বর্ণলতার মত। দুজনেই উচ্চারন করলো
happy valentine's day!
ক্রিস বললো,
you are my love. I love you my love. Happy Love day Anna, I love you, I love you today and forever.
আন্না যে কোন স্বপ্নের দেশের হারিয়ে গেছে তা সে জানে না। কেবল এক বিচিত্র অনুভূতি, আবেগে সে বারবার শিহরিত হচ্ছিল। এ এক অনির্বচনীয় আনন্দ। দুজনার ভালবাসার স্রোত এই ভ্যালেন্টাই
ন্স দিবসে এক হয়ে মিশে গেল। তাদের অন্তরঙ্গ আশ্লেষে গভীর প্রেম একজনের অন্তর থেকে অন্যজনের অন্তরাত্মায় সঞ্চারিত হল। নিবিড় বাহু বন্ধনে আন্নার ব্যাকুল কন্ঠ কি যেন বলতে চাইলো । ক্রিস বললো,
Please hold your tounge and let me love.

 

***


মানস সুন্দর!

অনুরাধা


সেদিন ছিল খুব সকালে ক্লাস। ঘন কুয়াশায় সারা কার্জন হল মোড়ানো। কোন এক অজ্ঞাত কারণে ছেলেমেয়েরা কেউই আসেনি সেদিন ক্লাসে। আমি হঠাত করেই পুরো বিল্ডিং – এ একদম একা হয়ে পড়লাম। হলের টানা বারান্দার সেই সামনের এগুনো চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দৃষ্টি দূরে বহুদূরে। চারিদিকে কুয়াশায় ঢাকা ভীষণ এক নীরবতায় সময় যেন ঠাঁয় থেমে আছে। হঠাতই মনে হল সাদা কুয়াশা ভেদ মেরুন সোয়েটার পরে বহুদূরের ঐ গেইট দিয়ে কে যেন একজন এগিয়ে আসছেন। এতক্ষণ পর সারা কার্জন হল চত্বরে কোন একজনের দেখা পাওয়া। চেনা যাচ্ছে না, স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে না। তবে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হলেন তিনি। এবার সত্যিই অবাক হবার পালা।
সেই চিরচেনা ভঙ্গী। দুহাত পকেটে ভরে কি যেন ভাবছেন আপন মনে নীচের দিকে তাকিয়ে।  আমাদের সেই প্রিয় মানুষটি। ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য আর স্মার্টনেসে যিনি কার্জন হলের সকলের হৃদয় হরণকারী। কিন্তু এখনই বা কেন, এখানেই বা কেন? এই দীর্ঘ পথ ধরে তার ধীর পদক্ষেপে হেঁটে আসা উপভোগ করলাম অনেকক্ষণ ধরে। মানস সুন্দর! খুব কাছাকাছি যখন এলেন বারান্দা থেকে নিজেকে আড়াল করে সরে এলাম। সংকোচ বোধ। পাছে তিনি দেখে ফেলেন।

কুয়াশা কেটে গেল একঘন্টার মাঝে। এরইমধ্যে ছেলেমেয়েরা এসেছে সবাই। জানতে চাইলাম কেন কেউ আসেনি ক্লাসে আজ সকালে, এমনকি স্যারও। তারা একযোগে বলে উঠলো, ‘তুমি জানতে না আজকের ক্লাস যে হবে না।’ আমিই একমাত্র বান্দা যে কিনা জানতাম না। জানলে হয়তো বা সেই সাত সকালে আসতাম না। আর ওনাকে দেখতেও পেতাম না এত কাব্যিক রূপে।
বন্ধুরা বললো, আজ আর পড়ালেখায় তাদের মন নেই। কেউ ক্লাস করবে না, শুধু ঘুরে বেড়াবে।
-‘কেন?’ আমার আবার প্রশ্ন।
ওরা এবার আমায় পালটা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করলো। বললো, ‘তুমি জান না আজ যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে?’
এবার আমি বাকরুদ্ধ। আজ সকালে আমার কৃষ্ণদর্শন তাহলে কি ছিল আমার জন্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে'র সারপ্রাইজ? আমার অজান্তে পাওয়া ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র শ্রেষ্ঠ উপহার?!

কার্জন হল, ঢাকা
১৯৯৪

***

 

 

রম্য রচনা
গোপনাঞ্চল বিশেষজ্ঞ স্যানিটারি মিস্ত্রি
মূলঃ ইভগেনী পেত্রোসীয়ান    অনুবাদঃ সাইদুজ্জামান



আমার পেশাগত ভাবে গোপনাঞ্চলই কাজের স্থান। ট্যাপ মেরামত, সিংক বদলানো, কোথাও কিছু লিক করলে বন্ধ করা। আজকাল অনেকেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম কি হবে মন খারাপ করে? লড়াই করতে হবে বেঁচে থাকার, অর্থ উপার্জন করার।
বিজ্ঞাপন দিলাম, যার দরকার, স্যানিটারি সার্ভিস দিব। এবং আমার টেলিফোন।
সব কিছুই নির্ভুল। কিন্তু ওরা, পত্রিকা কর্মীরা সব ওলোট পালোট করে ফেলেছে। আমার প্রস্তাব ছাপিয়েছে পাশের বিজ্ঞাপনের নীচে। আর ওখানে কোন এক নোংরা লোক যা প্রস্তাব করেছে! থু ফু, স্মরণ করতেই লজ্জা হয়। লিখছে, যে কোন বয়সের নারীদের অন্তরঙ্গ সেবায় নিয়োজিত। এবং আমার টেলফোন নম্বর।
কিন্তু আমি তো কিছুই জানি না এসবের। ঘরে বসে আছি, নৈশ ভোজ সারছি। ফোন কল আসা শুরু হল। নারী কন্ঠ জিজ্ঞাসা করছে,
- আপনি কখন আসতে পারবেন আপনার সার্ভিস বিষয়ে?
আমি বলি,
- এমনকি এক্ষুণি আসতে পারি। তবে আপনি এই রাতে চাচ্ছেন কেন? আগামী কাল আমার আছে সর্বমোট সাতটি কল। তারপর আপনার ওখানে যেতে পারি।
এবার মহিলা বলছেন,
- আপনি কি বলতে পারেন সাতটি কলের পর কিসের জন্য আমার দরকার হবে আপনাকে?
আমি বলি,
- ও ভা বে , ব ল বে ন না। আপনি আমাকে এখনো চেনেন না...এমনও হয় দিনে ১৬ জন খরিদ্দার কে সার্ভ করে থাকি। আগামীকাল প্রতিবেশিনী অনুরোধ করেছে তাকে সার্ভিস দিতে। ওর স্বামী ভদ্রলোক অসুস্থ। তবে প্রমিস করেছে অর্ধ লিটারের।
মহিলা বলছেন,
-জানেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি আমার এখানে আসতে চাচ্ছেন শুধুমাত্র সাত সাতটা কলের পরেই নয় তার উপর মাতাল হয়ে?
আমি বললাম,
-আমাদের পেশায় এটা ছাড়া চলে না। কাজ করতে হয় প্রধানত স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়, যা শারিরীক ভাবে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এমনও হয় ঘাম বেরিয়ে আসে flange পাইপে ফিট করতে।

মহিলা বলছেন,
-আপনি অশ্লীল ভাষা ছাড়া কথা বলতে পারেন না?

আমি বলি,
-আর কিভাবে বলবো?
Flange আফ্রিকাতেও flange. পাইপের কথা না হয় বাদই দিলাম।
এসময়ে মহিলা ফোন রেখে দিলেন। আশ্চর্য্য! ভাবছি, কি অদ্ভুত এ মহিলা। জীবনে কখনো পাইপ হাতে ধরে দেখেন নি নাকি?
আবার টেলিফোন বেজে উঠলো, একজন মহিলা জিজ্ঞেস করছেন,
-আপনার শ্রম কিভাবে পরিশোধ করা হয়?
বোকার মতো প্রশ্ন তাই আমিও বোকার মতো উত্তর দিই।
-নগদ টাকা অথবা বিনিময়। বস্তুর বদলে বস্তু, শ্রমের বদলে শ্রম। সেবার বদলে সেবা।

মহিলা বলছেন,
- আপনি বলছেন কি, এসবের পরও আপনি ইন কাইন্ড নিয়ে থাকেন ?

আমি বলি,
- কেন নেব না? যদিও একটা শ্রম অন্য শ্রমের সমতুল্য নয়। এক জিনিস ধরুন কানেকশান দেয়া, অন্য জিনিস প্যাড (ওয়াশার) বদলানো। তৃতীয়ত ট্যাংক পরিষ্কার করা। তাছাড়া এমনও হয় যে পরিশ্রমের কাজ, তার উপর দুর্গম স্থানে।

মহিলা বলছেন,
-কি রকম এমন দুর্গম স্থানে?
-কে জানে না কোন স্থানে? আমি বলি, যখন ধরুন নিষ্কাশন নালী ঠিক হাঁটুর উপর অবস্থিত। অথবা এমনও হয়, কোন এক বৃদ্ধার সাথে অর্ধ দিবস কেটে গেল। তার সিঙ্কে মরিচা ধরেছে। নীচ থেকে দেখতে গেলে বাবা গো !!
ওখানে একশ বছর কেউ চোখ তুলে তাকায় নি। সব জায়গায় moss জন্মে গেছে। বাধ্য হতে হয় স্টপার লাগাতে।

মহিলা বলছেন,
-আপনি তাহলে বৃদ্ধাদের কাছেও যান?

আমি বলি,
- ওদের থেকেই তো বেশী কল আসে।
এসময়ে এই মহিলাও ফোন রেখে দিলেন। ভাবছি এ কিরকম পাগলাগারদ মার্কা দিন আজ!
আবার টেলিফোন বেজে উঠলো। এবারেও নারী কন্ঠ। জিজ্ঞেস করছেন,
-আপনি কোথায় আপনার পেশা অর্জন করেছেন?
আমি বলি,
-কোথায় আবার? কারাগানদায়। আপনি খামোখা সময় নষ্ট করবেন না। আপনি আমাকে বরং বলুন, ঠিক কোন স্থানে আপনার ফাটল ধরেছে? আমি যাতে বুঝতে পারি ঠিক কোন ইন্সট্রুমেন্ট সঙ্গে নিতে হবে।
মহিলা বলছেন,
-আপনার কি একটি ইন্সট্রুমেন্ট নয়? নাকি?

আমি বলি,
-আমি কি আপনার কাছে ছেলেমানুষ যে একটি ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে বেড়াবো? আমার প্রতিটি সার্ভিসের জন্য নির্দিষ্ট ইন্সট্রুমেন্ট। বিভিন্ন ক্যালিবারের বলতে পারেন।

মহিলা বলছেন,
-কি দারুণ সার্ভিস। !!! আর আপনার কাছে কি সব ক্যালিবারই আছে?
আমি বলি,
- আমার যদি নাও থাকে পেত্রোভিচকে নিয়ে আসব। পেত্রোভিচ এমনিতেও পেনশানে আছেন। কিছুই করার নেই।
এসময় এই মহিলাও ফোন রেখে দিলেন।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আজ কি ঘটছে!
হঠাত ঐ পত্রিকাটি চোখে পড়লো।
মাগো !!! কি যে ভাবলেন মহিলা, আমরা যখন ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে কথা বলছিলাম।
আমি বুঝলাম পেশা বদলানো দরকার। কারণ স্যানিটারি সার্ভিসে কল আসে অনেক অনেক কম।
 

***

 

ভালবাসা দিবসের নাটক

চান্দশা উপাখ্যান

*

আর্কাইভ

*

Best view with Microsoft Internet Explorer

Font download link: http://omicronlab.com/download/fonts/SolaimanLipi_20-04-07.ttf